সেনা মোতায়েনে ফিরেছে আস্থা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গত কয়েক দিনের চিরচেনা চিত্র এক দিনেই পাল্টে গেছে। এর আগে যেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে আসত বিস্তর অভিযোগ, কিন্তু গতকাল ঘটেছে উল্টোটা। কারণ গতকালই প্রথম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়ে বলেছে, বিএনপির প্রার্থী-কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন তাদের প্রার্থী-কর্মীরা। এই প্রথম ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ এলো নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। এর বিপরীতে পাল্টা অভিযোগ নিয়ে হাজির হননি, দৈনিক কয়েকবার নির্বাচন ভবনে এসে অভিযোগ দেওয়া বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কিংবা ঐক্যফ্রন্ট। বরং নির্বাচনের প্রচারে মনোযোগ দিয়েছেন তারা। এতে সারা দেশে সরগরম হয়ে উঠেছে প্রচার আর ফিরে এসেছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

এর মাধ্যমে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েনের এক দিনেই সুফল পেতে শুরু করেছে সাংবিধানিক সংস্থা ইসি। তফসিল ঘোষণার পর গতকাল সোমবার বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট কিংবা সরকারবিরোধী জোটের কেউ ইসিমুখী হননি। উপরন্তু নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে স্বস্তি ফেরার বিষয়টিই বলেছেন তারা।

এদিকে অভিযোগ কমতে থাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেই মনে করছেন ইসি-সংশ্লিষ্টরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও ভোটকে ঘিরে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আত্মবিশ্বাসী সিইসি গতকাল একটি অনুষ্ঠানে ভোটারদের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। অপ্রীতিকর সবকিছুই এখন নিয়ন্ত্রণ হবে বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই হঠাৎ করে বদলে যেতে শুরু করে দেশের পরিস্থিতি। এ পর্যন্ত বিএনপিসহ বিরোধী জোটগুলোর শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। এসব আমলে নিয়ে কমিশন থেকে দায়িত্বশীলদের নানা সময়ে নির্দেশনা দেওয়া হলেও এসব নির্দেশনা কেউই মানছে না বলেও ফের অভিযোগ পেতে থাকে ইসি। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা এবং নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন দল থেকে সেনা মোতায়েনের তাগাদা পেতে থাকে কমিশন। তাই গতকাল সোমবার সেনা মোতায়েন হওয়ায় এক দিনেই কমে আসে অভিযোগ।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সেনা মোতায়েনকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে। ক্ষমতাসীনরাও এতে অখুশি নন। সর্বোপরি ভোটারদের মনে ফিরে আসে আস্থা ও ভরসা। অবশ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দুদিন আগেই আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছিলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেনা সদস্যরা মাঠে নামলে পুলিশের কর্তৃত্ব খর্ব হবে। এই বিশ্বাসটুকু সেনাবাহিনীর সদস্যরা রক্ষা করতে পারবেন—এটা জেনেই দলমত নির্বিশেষ বিরোধী দল বারবার সোচ্চার কণ্ঠে বলে আসছিল।

এদিকে সেনা মোতায়েনের ফলে ভোটারদের মধ্যে আস্থা ফিরবে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে চলমান ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটিং কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের ফলে ভোটারদের মনে আস্থা ফিরে আসবে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের উদ্দেশ্যই হলো ভোটারদের মনে আস্থা তৈরি করা। সেনাবাহিনী সব ধরনের দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে কে এম নুরুল হুদা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনীর সামনে যদি এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন, তখন তারা নিজ উদ্যোগে সেখানে গিয়ে সে পরিস্থিতি সংযত করবে। এগুলোর আইন আছে। এইড টু সিভিল পাওয়ারের আলোকে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সব রাজনৈতিক দলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন যেন নির্বাচনের মতো হয়। সহিংসতা, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, তর্ক-বিতর্ক, হাঙ্গামা পরিহার করে কেবল নির্বাচনী প্রচার মাধ্যমে নির্বাচনে নিবদ্ধ থাকার জন্য অনুরোধ করছি। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী এলে আরো সহায়তা হবে। আমি বিশ্বাস করি, অপ্রীতিকর সবকিছু এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাই। তাদের সহযোগিতা করতে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চৌকষ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নুরুল হুদা বলেন, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ গুরুত্ব দিতে গিয়েই ইসি সীমিত সংখ্যায় মাত্র ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট নিচ্ছে। এখনো যারা ইভিএম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন, তাদের বলি, আপনারা ৬টি আসনে চলমান প্রশিক্ষণে আসুন। সবকিছু ভালোভাবে জানুন, বুঝুন।

২৭ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভার অনুমতি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এগুলো তো আইনশৃঙ্খলার বিষয়। ডিএমপি এসব ভালোভাবে বোঝে। জনসভা ঘিরে কোনো থ্রেট আছে কি না, কোনো আশঙ্কা আছে কি না আমি তা আলাপ করে দেখব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর